The role of students in every country দেশগঠনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

 

দেশগঠনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা 

আমাদের এই ভারতবর্ষ অনেক রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করলেও দেশের বহু মানুষ জীবনধারনের প্রাথমিক উপাদানগুলি থেকে আজও বঞ্চিত । তাই ছাত্রছাত্রীদের দুর্বার প্রাণশক্তি পারে দেশগঠনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে । কেননা তাদের অকুণ্ঠ সাহস , কর্মনিষ্ঠা ও এগিয়ে চলার গতি ভারতবর্ষের বিভিন্ন সমস্যাকে সমাধানের লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারবে ।স্বভাব বৈশিষ্ট্যে ছাত্রছাত্রীরা নব যৌবনের অগ্রদূত , তারা তারুণ্যের প্রতীক । সেই তারুণ্য কোনাে বাধা - বন্ধ মানে না । তাদের এই চারিত্রিক সম্পদ দেশের সম্পদ । কেননা আজকের ছাত্রছাত্রী ভবিষ্যতের একজন সুবিবেচক সুনাগরিক হয়ে ওঠে । ছাত্রছাত্রীরা এগিয়ে আসে বলেই তাদের শক্তিকে ছােটো করে দেখা যায় না । বিশেষ করে দীর্ঘদিনের সামাজিক সংস্কার ও শৃঙ্খলমােচনের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের একটা ভূমিকা থাকে । দেশ মানে তাে কোনাে মূর্তি বা ‘ অ্যাবস্ট্রাক্ট পদার্থ নয় । দেশ মানেই দেশের মানুষ ও প্রকৃতি । তাই মানুষ ও প্রকৃতির সুরক্ষা হল দেশগঠন ও দেশসেবার মূল কথা । দেশের উন্নতি মানে অর্থনৈতিক উন্নতি ও সামাজিক উন্নতি । দেশ যেমন অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত হবে তেমনি জগৎসভায় দেশ শ্রেষ্ঠ আসন নেবে । দেশের মানুষ হিসেবে বিশেষ সম্মান বা মর্যাদাকে বাড়িয়ে দেবে — এটা দেশ ও দেশের মানুষ হিসেবে সকলের কাম্য । স্বাধীনতার ৬৭ বছর পরেও ভারতবর্ষের বহু মানুষ অন্ন - বস্ত্র - বাসস্থান - শিক্ষা - স্বাস্থ্য প্রভৃতি অধিকার থেকে বঞ্চিত । ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি , প্রাকৃতিক সম্পদের অসম বন্টন , পরিবেশের অবনমন , সাম্প্রদায়িকতা , সন্ত্রাসবাদ , বিচ্ছিন্নতাবাদ ইত্যাদি সমস্যা ভারতবর্ষের সংহতিকে বিনষ্ট করেছে । দেশের জন্য আমরা দেশবাসী , দেশ না থাকলে আমাদের অস্তিত্ব যে বিপন্ন - একথা উপলদ্ধি করলে দেশগঠনের প্রয়ােজনীয়তা ও গুরুত্ব অনুভব করা যায় । আমরা সবাই ভাবি , ব্যক্তিগত উন্নতি মানেই তাে দেশের উন্নতি । কিন্তু এ ধারণা জাতিগত দিক থেকে ঠিক নয় । কারণ এতে বৈষম্য সৃষ্টি হয় আর এই বৈষম্যের কারণে দেশবিভাগ হয় । তাই দেশকে গঠন করার লক্ষ্যে দেশের সেবার প্রয়ােজনীয়তা আছে । ছাত্রছাত্রীদের দেশগঠনের ক্ষেত্রে করণীয়গুলি হল , আগে দেশকে জানতে হবে । অর্থাৎ দেশের ভূগােল , ইতিহাস , সভ্যতা - সংস্কৃতি , সমাজ , সাহিত্য প্রভৃতিকে ভালাে করে উপলদ্ধি করতে হবে । দেশের সঙ্গে আমাদের মা ও সন্তানের মতাে আন্তরিক সম্পর্ক না গড়ে তুললে দেশের প্রকৃত উন্নতি ঘটানাে সম্ভব নয় । এরপর দেশের আশু চাহিদা ও সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে । প্রশ্ন উঠবে , অধ্যয়ন যেহেতু ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র উদ্দেশ্য সেখানে এসব কীভারেই বা সম্ভব । সম্ভব হবে পড়াশােনার সূত্রে মানসিকতার মধ্যে বিষয়টিকে রাখলে । মনে রাখতে হবে , ক্ষুদিরাম , সুভাষচন্দ্র তাে ছাত্রাবস্থায় দেশগঠনের কাজে লেগেছিলেন । প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর নিজস্ব একটি পরিমণ্ডল আছে । সেই পরিবেশে স্বাস্থ্য , শিক্ষা , অল্প , বাসস্থান প্রভৃতি বিষয়ে কী সমস্যা রয়েছে , তা জেনে সে ব্যাপারে দলবদ্ধভাবে সমস্যা সমাধানের লক্ষে তাদের পাশে দাঁড়ানাে ও উধ্বর্তন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানানাে । সমাজের বহুদিনের কুসংস্কার , ভেদাভেদ , মৌলবাদ , আঞ্চলিকতা , ভাষাগত সমস্যা প্রভৃতি থেকেই গেছে । সেইসব সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে সােচ্চার হওয়া ক্রমাগত প্রচার করা । যে কোনাে অনিয়ম , বিশৃঙ্খলা , গুজব রটানাে প্রভৃতি দেখলে প্রতিবাদী হওয়া । আমরা বিশ্বাস করি অস্ত্রের থেকে কলম শক্তিশালী । তাই ছাত্রছাত্রীদের দেশের উন্নয়নে যে কোনাে সমস্যার প্রতিকারে কলম ধরা অবশ্যই প্রয়ােজন । আমাদের এই বিশ্বায়নের যুগে আমাদের অভিভাবকরাচান তাদের একটি বা দুটি সন্তানকে ক্যারিয়ারিস্ট তৈরি করতে । তাদের লক্ষ্য কোনােরকমে পড়াশােনা করে একটি চাকরি লাভ করা । সেক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেশপ্রেম আসবে কী । করে ? প্রতিযােগিতার আসরে টিকে থাকতে হলে কীভাবে তা সম্ভব হবে । বলা যেতে পারে ছাত্রছাত্রীরাই পারবে তাদের অভিভাবকদের বুঝিয়ে এই বাধা কাটিয়ে উঠতে । এজন্য বিদ্যালয়ের পঠন পাঠনের পরিকাঠামাের পরিবর্তন , অভিভাবকদের মানসিক উন্নতি এবং সরকারের সহযােগিতা একান্ত প্রয়ােজন । তবেই এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ছাত্রছাত্রীরা তাদের জাতীয় সঞ্জকে মেলে ধরবে তথা দেশগঠনে আগ্রহী হবে ।