ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য, Responsibilities and duties of student life

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

 প্রাচীনকালে গুরুগৃহে তপােবনে ছাত্রদের শিক্ষা শুরু হত । ছাত্র জীবনের মন্ত্র ছিল – ছাত্ৰনাম অধ্যায়নং তপঃ । কিন্তু বর্তমানকালে পরিবেশ পরিস্থিতি এবং সমাজের রূপ পরিবর্তিত হয়েছে । বর্তমানে ছাত্রদের শিক্ষা শুরু হয় মায়ের কাছে , তারপর বিদ্যালয় তারপর বিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরিয়ে উচ্চ বিদ্যালয় ( কলেজ ) তারপর বিশ্ববিদ্যালয় । এভাবে তারা ধাপে ধাপে বৃহত্তর ছাত্রসমাজের সংস্পর্শে আসে এবং তাদের অংশীভূত হয় । এই সময় জীবনবােধের সঙ্গে দুটি কথা যুক্ত হয় , তা হল দায়িত্ব ও কর্তব্য । যে সন্তান পরিবারে মাতার কোলে এবং পিতার আদরে মানুষ হয় , সেই পরিবারের সদস্যদের প্রতি তাদের কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে । বৃদ্ধ বয়সে মাতা - পিতার সেবা , পরিবারের মানুষের প্রতি ভালােবাসার দায়বদ্ধতা প্রত্যেক সন্তানেরই থাকে । সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে প্রতিবেশীদের বিপদে প্রয়ােজনবােধে সাহায্য করা , অসহায়কে সহায়তা প্রদান , দুঃখ - দরিদ্রদের যথাসাধ্য সাহায্য — শুধু অর্থ দিয়ে নয় , নিজের বল , বুদ্ধি , বিবেক দিয়ে । নিরক্ষর ব্যক্তিকে শিক্ষার আলাে প্রদান করে , রােগাক্রান্ত ব্যক্তিকে সহানুভূতি দিয়ে , ছাত্ররাই পারে সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে । ছাত্ররাই পারে অন্যায় অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে তাদের প্রাণশক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে , তারাই পারে সমাজ সংগঠনের দ্বারা সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে । তাই বিভিন্ন স্কুল কলেজে ছাত্রদের মধ্যে এই সমাজসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে । এ ব্যাপারে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে । উপকারী , উন্নত , ছাত্রসমাজ গড়ে তুলতে গেলে দরকার নির্দিষ্ট কর্মপন্থা । এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থারও কিছু সংস্কার প্রয়ােজন । আসলে শিক্ষার মূল লক্ষ্য সম্বন্ধে আমরা ভুল ভেবে বসেছি । শিক্ষা মানে পরীক্ষায় পাশ করা নয় । শিক্ষা মানে ছাত্রছাত্রীদের দেহ ও মন এবং চেতনার সার্বিক বিকাশ ঘটানাে । এজন্য বাল্যকাল থেকে তাদের মধ্যে এই সুকুমার বৃত্তিগুলি প্রকাশের জন্য অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজকে সচেতন হতে হবে । প্রয়ােজন সুস্থ , সবল ও উদার মানসিকতার । সমাজসেবী গড়ে ওঠে না , তাকে সমাজসেবী হতে হয় । তাই ছােটোবেলা থেকেই একটি ছাত্রকে সেই ধরনের মানসিক পরিমণ্ডলে লালিত পালিত হতে হবে । তার সহানুভূতিশীল ও অপরের দুঃখকে উপলদ্ধি করার মতাে মনের বিকাশ দরকার । তাই তাদের অন্তরেও প্রেরণা এবং এই কাজের অনুকূল সহজাত প্রবৃত্তি দরকার । সমাজসেবক ও দেশরক্ষাকারী হিসাবে নিজেকে গড়ে তােলার জন্য চাই দৃঢ় লক্ষ্য ও উপযুক্ত মানসিকতা । কারণ সামান্য পরিকল্পনার অভাব ও অবহেলা গােটা জীবনকে নষ্ট করে দিতে পারে । আমাদের দেশ নানা সমস্যায় জর্জরিত । নিরক্ষরতা , সম্প্রীতির অভাব , দারিদ্রতা , আমাদের নিত্যসঙ্গী । সেখানে শিক্ষার আলাে জ্বালতে পারে ছাত্রসমাজ । বিজ্ঞান ও যুক্তির প্রয়ােগ দ্বারা ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে তারা কুসংস্কারকে দূর করতে পারে । দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে পারে সৌভ্রাতৃত্বের এক মহান আদর্শ । কিন্তু এই সময়ে ছাত্রছাত্রীদের এক বিভ্রান্তি যেন গ্রাস করেছে । পরীক্ষার হলে নৈরাজ্য , শিক্ষক - শিক্ষিকাদের প্রতি কদর্য আচরণ , ছাত্ররাজনীতির নামে গুণ্ডামি আজ প্রাধান্য পাচ্ছে । কিন্তু এই ভ্রান্তপথ ও আদর্শহীনতা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না । সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এর প্রতিবাদ করেন । ছাত্রছাত্রীরাও নিজের ভুল বুঝতে পারেন । আশা করা যায় রাষ্ট্রব্যবস্থা আগামীদিনে এই পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে নতুনভাবে পরিকল্পনা করবেন । বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্র লেখাপড়া ও সমাজমনস্কতার চর্চা হবে । বছরের দীর্ঘ অবসরগুলিতে ছাত্রসমাজকে নিয়ােজিত হতে হবে সেবামূলক কাজে । তবেই ছাত্রসমাজের হাত ধরে দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নতি ঘটবে ।